শিরোনাম :
পহেলা মে থেকে বন্যার তথ্য দিচ্ছে ভারত উপজেলা নির্বাচন : তৃতীয় ধাপে মনোনয়ন জমা দিলেন ১৫৮৮ প্রার্থী কামরাঙ্গীর চরে নতুন ভবন নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণের অনাপত্তিপত্র প্রদান সারারাত রাজশাহী নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালুবাহি ট্রলি ও ট্রাক রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ১৬ মতিহার থানার সহযোগিতায় পরিবারের কাছে ফিরল হারিয়ে যাওয়া দুই শিশু তানোরে হিমাগারে রাখা আলুতে গাছ ভারতীয় আলু মজুদের অভিযোগ কয়েকটি রুটিন মেনে চললেই মুক্তি পাবেন তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন
মা-বাবার ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশনা

মা-বাবার ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশনা

মা-বাবার ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশনা
মা-বাবার ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশনা

ধর্ম ডেস্ক: মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষের দুনিয়ায় আসার মাধ্যম হচ্ছে মা-বাবা। তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের পর মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে সর্বোচ্চ শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না। তোমরা মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখো, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই।

’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৪)

১. মা-বাবার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলা

মা-বাবা সব মানুষের কাছে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। তাঁদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে এবং তাঁদের সঙ্গে নম্র-ভদ্র আচরণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার রব আদেশ করেছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো উপাসনা কোরো না এবং তোমরা মা-বাবার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তুমি তাদের প্রতি উহ শব্দটিও বোলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না।

আর তাদের সঙ্গে নরমভাবে কথা বলো।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)

২. তাঁদের অনুমতি ছাড়া সফর না করা

মা-বাবা সর্বদা সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন। সন্তান কখনো তাঁদের চোখের আড়াল হলে তাঁরা চিন্তিত থাকেন। এ জন্য সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে কোথাও গেলে তাঁদের জানিয়ে এবং তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে যাওয়া। এ মর্মে একটি হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করল।

তখন তিনি বলেন, তোমার মা-বাবা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করিম (সা.) বলেন, তবে (তাদের খেদমতের মাধ্যমে) তাদের মধ্যে জিহাদের চেষ্টা করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০০৪)

৩. রাগান্বিত হয়ে তাঁদের মুখোমুখি না হওয়া

মা-বাবার সঙ্গে শালীনতা বজায় রাখার অন্যতম দিক হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে রাগান্বিত হয়ে কখনো কথা না বলা। কেননা এতে তাঁরা কষ্ট পান। আর মনঃকষ্টের কারণে তাঁরা সন্তানের বিরুদ্ধে কোনো বদদোয়া করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়—১. মা-বাবার দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯০৫)

৪. মা-বাবার অবর্তমানে তাঁদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

মা-বাবার জীবদ্দশায় তাঁদের সঙ্গে যেমন সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, তেমনি তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের মুসলিম বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এ মর্মে হাদিসে এসেছে, ‘সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হলো কোনো ব্যক্তির পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫২)

৫. মা-বাবার মৃত্যুর পরে তাঁদের জন্য দোয়া করা

মা-বাবা মৃত্যুবরণ করলেও তাঁদের প্রতি সন্তানের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। বরং তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য দোয়া করা সন্তানের অন্যতম কর্তব্য। আল্লাহর শেখানো দোয়া পবিত্র কোরআনে এসেছে—‘বলো, হে আমার রব! তুমি তাদের প্রতি দয়া করো যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৪)

৬. তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য দান-সদকা অব্যাহত রাখা

মা-বাবা মৃত্যুবরণ করলে তাঁদের মাগফিরাতের জন্য দান-সদকা করা তাঁদের সঙ্গে শিষ্টাচারের অন্তর্গত। এই দানের সওয়াব তাঁরা কবরে বসে পাবেন। এ মর্মে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, একজন ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে বলেন, ‘আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর আগে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সদকা করে যেতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করলে তিনি এর নেকি পাবেন কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৮)

৭. মৃত্যুর পর তাঁদের কবর জিয়ারত করা

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের কবর জিয়ারত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) একবার নিজের মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশপাশের লোকদেরও কাঁদালেন। তারপর বলেন, ‘আমি আমার মায়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবরের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো। তাই তোমরা কবরের কাছে যাবে। কারণ কবর মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৪)

৮. মা-বাবাকে গালি দেওয়ার উপলক্ষ তৈরি না করা

মা-বাবা অপমানিত হয়—এমন কোনো কাজ করা এবং যেসব কাজের কারণে তাঁদের গালি দেওয়া হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। এ মর্মে হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কবিরা গুনাহসমূহের অন্যতম হলো নিজের মা-বাবাকে গালি দেওয়া। তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! নিজের মা-বাবাকে কোনো মানুষ কিভাবে গালি দিতে পারে? তিনি বলেন, সে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩)

মহান আল্লাহ আমাদের মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করার তাওফিক দান করুন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply